শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

ছোট গল্প

জাফর সাহেব রাতুলের দিকে অবাক হয়ে
তাকিয়ে আছেন!তার মাথায় রাতুলের
কথাটি ঠিক মত প্রবেশ করলো না!
-কি বললি তুই!আবার বল!

-আব্বা আমি বিয়ে করবো।২য় বারের মত
বলল রাতুল।তার চোখে মুখে লজ্জার কোন
চিন্হ নেই!
-কি করবি?
-আব্বা ম্যায় শাদী কারনাচাহতাহু!
-হিন্দী বলতেছস কেন?মেয়ে কি
ইন্ডিয়ান?
-না আব্বা,আমি মনে করলাম মার সাথে
হিন্দী সিরিয়াল দেখতে দেখতে আপনি
বাংলা ভাষা ভুলো গেলেন নাকি!আমি
তো একবার বলছিলাম।
-বৌরে কি খাওয়াবি?
-কেন আব্বা,ভাত,তরকারি আমরা যা যা
খাই!আমি তো মানুষই বিয়ে করবো,মেয়ে।
আপনি খাওয়া নিয়ে টেনশন করতেছেন
কেন?রাতুল কিছুটা অবাক হয়ে বলল।
রাতুলের চেয়ে তিন গুন বেশি অবাক হল
জাফর সাহেব ছেলের নির্লজ্জতা দেখে!
এই বয়সে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে ব্লেড
কেনার কথায় চিন্তা করতেন না,আর এ
ছেলে বিয়ে করবে বলে লাফাচ্ছে!
-আমি বলতে চাইছি,আমার টাকা দিয়ে
তো আমি বাসায় একটা উন্নত মানের গাধা
পালছি।এখন তো গাধার বৌ ও পালতে
পারবো না, তাই না?আপনার বৌ আপনার
টাকায় চালাইতে হবে।এখন বৌ চালানোর
টাকা কোথায় পাবেন?
-ওহ একথা!হেসে বলল রাতুল।চিন্তা তো
আমি করেই রাখছি আব্বা।আমি দুইটা
মটোর রিক্সা কিনবো।দুইটা ড্রাইভার
রাখবো।দিনে ৩০০টাকা করে দুইটা ৬০০।
মাসে ১৮০০০টাকা!আমরা দুজন খেয়ে
আপনাকেও অর্ধেক খাওয়াতে পারবো!
আজ বোধয় জাফর সাহেবের অবাক হওয়ারি
দিন।তিনি অবাকের শেষ সীমায় অবস্থান
করছেন ছেলের কথা শুনে!
-তুই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে রিকসা
কিনবি?
-রিকসা না আব্বা,মটোর রিক্সা।
- তুই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মটোর
রিকসা কিনবি?
-জ্বি আব্বা।শুক্রবার শুক্রবার করে আমরা
ঘুরতে যাবো।লং রিকসা ড্রাইভে।এক
রিক্সায় আপনি আর মা,অন্যটাই আমি আর
শীমুল!
-শীমুলটা কে?
-আপনাদের হবু বৌ মা!
-কোথায় থাকে?
-এমনিতে ফেনী থাকে,তবে সকাল থেকে
আমাদের বাসার সামনে আছে!
-আমাদের বাসার সামনে মানে?
-মানেটা আব্বা আপনি বারান্দায় গেলে
পাবেন।
জাফর সাহেব বারান্দায় এসে নিচে
তাকালেন।নীল জামা পড়া একটি অপূর্ব
সুন্দরী মেয়ে তাদের বাসার দিকেই
তাকিয়ে আছে!মেয়েটির নিষ্পাপ চেহারা
জাফর সাহেবের অবসর প্রাপ্ত সরকারী
মনকে এক নিমেষে গলিয়ে ফেলল।
এত সুন্দর একটি মেয়ে কিভাবে তার বলদ
ছেলের প্রেমে পড়ে তা কিছুতেই তার
মাথায় ঢুকছে না!
-বৌ মা কে ঘরে নিয়ে আয় বলদ!সকাল
থেকে মেয়েটা বাহিরে আর তুই আমার
সাথে "ফাঙ্কিয়া ফাঙ্কিয়া" গল্প
করতেছস?বলদের বাচ্ছা বলদ!
শীমুল রাতুলের বাবাকে দেখে ভালই ভয়
পেয়েছে।রাতুল বলেছিল সে সব কিছু
ম্যানেজ করে রাখবে।তাই বাসা থেকে
পালিয়েছে।অবশ্য না পালিয়ে তার আর
কোন পথ ছিল না।সৎ মা য়ের পরিবারে আর
থাকা সম্ভব হচ্ছিল না।ইদানিং উনি যে
সব পাত্র দেখছেন তার জন্য,ওদের একজনকে
বিয়ে করার চেয়ে চিড়িয়াখানার বাদরের
খাঁচায় বাদরের সাথে থাকা শ্রেয়!তা
ছাড়া,রাতুলকে তার খুব একটা খারাপও
লাগে না।ছেলেটা কিছুটা বোকা হলেও
অনেকটা সৎ।গত কয়েক মাসে শীমুল তা বুঝে
গেছে।
-বাবা তোমায় ঘরে নিয়ে যেতে বলল।
শীমুলের ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল রাতুল।তার
মুখে হাসি। বিজয়ের হাসি।
শীমুলের মুখেও হাসি।স্বাধীনতার হাসি।
স্বাধীনতা আর বিজয় দুটোই সুখের।অন্যরকম
এক সুখ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন